হযরত খাদিজা (রা:) এর জীবনী - Hazrat Kadija (R.) Life History

 হযরত খাদিজা (রা:) এর জীবন কাহিনী

Voice of Bangla,Islamic History,Islamic News,history of islam,হযরত_খাদিজা_রাঃ_এর_সম্পূর্ণ_জীবনী,Khadija_bint_Khuwaylid,Mother_of_the_Believers,Khadijah_became_a_very_successful_merchant,Khadijah_was_the_daughter_of_Khuwaylid_ibn_Asad,islamic history in bangla,islamic history hd bd,islamic history documentary in bangla,মা খাদিজার,মা খাদিজার জীবন কাহিনী,মা খাদিজার জীবনী মিজানুর রহমান,হযরত খাদিজা রাঃ এর জীবনী,new waz,bangla waz,islamic image,Islamic picture,ইসলামিক ফটো,আম্মাজান খাদিজা রাঃ জীবনী

ভূমিকা

আমরা এমন এক নারী সম্পর্কে জানব, যিনি ইসলামের নারীদের মধ্যে একজন মহিয়সী নারী। যিনি শ্রেষ্ঠ নারীদের একজন। 

আরো পড়ুন. নেক আমল কাকে বলে


প্রথম মুসলমান নারী

যিনি প্রথম মুসলমান নারী, যিনি নবী করিম (সা.) এর ভাল স্ত্রী, তিনি ছিলেন সবদিক থেকে উচ্চপদস্থ,দয়াময়ী, খোদাপ্রিয়,দানশীল এবং বেহেস্তের ফুল হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) এর প্রিয় মাতা।


যার জীবনী ছিল উজ্জলতম ও ব্যক্তিত্ব ছিল নারীদের জন্য আদর্শস্বরূপ।

যার সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন_ আল্লাহ মুমিনদের জন্য যেমন ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া ও ইমরান তনয়া মারিয়ামকে উদাহরণ স্বরূপ করেছে, যেভাবে তাঁরা তাদের পবিত্রতাকে বজায় রেখেছিলেন। 

আরো পড়ুন সুহবাতের উদাহরণ 


যেভাবে আসিয়া ও মারিয়াম তাঁরা তাঁদের পবিত্রতাকে বজায় রেখেছিলেন এবং মহত্বতা অর্জন করেছিলেন।

ঠিক সেভাবে হযরত খাদিজা তাঁর পবিত্রতাকে বজায় রেখেছিলেন।


তাই হযরত খাদিজা (আ.) কে হযরত আসিয়া ও মারিয়ামের সাথে তুলনা করা হয়েছে। যেহেতু তিনিও আসিয়া ও মারিয়ামের মত নমুনা স্বরূপ ছিলেন।


হযরত খাদিজার পদমর্যাদা এত বেশি মূল্যবান ছিল যে, আল্লাহ তাঁর আসমানী কিতাব তাওরাত যা হযরত মুসা (আ.) এর উপর নাজিল হয়েছিল, তাতে উল্লেখ করেছেন যে,”হযরত খাদিজার (আ.) উপমা ঐ নদীর পানির সাথে যে পানি আবে হায়াত নামে প্রসিদ্ধ এবং যে নদীর দুই ধারে জীবন বৃক্ষ আছে।


যে বৃক্ষের বারোটি ফল আছে আর ঐ বৃক্ষের পাতাগুলো হচ্ছে উম্মতের জন্য নিরাময় স্বরূপ।

আরো পড়ুন অগোছালো অবস্থায় আমল শুরু


জন্ম ও বংশ

খাদিজা হস্তী বর্ষের ১৫ বছর আগে অর্থাৎ নবীর জন্মেরও ১৫ বছর আগে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা খুওয়াইলিদ ইবন আসাদ এবং মাতা ফাতিমা বিনতু জায়িদ।


পিতার বংশের ঊর্ধ্ব পুরুষ কুসাঈ-এর মাধ্যমে মুহাম্মদের বংশের সাথে তার বংশ মিলিত হয়েছে ।


এজন্যই নবুওয়ত লাভের পর খাদিজা নবীকে তার চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবন নাওফিলের কাছে নিয়ে গিয়ে বলেছিলেন, "আপনার ভাতিজার কথা শুনুন"। 

আরো পড়ুন দীন কাকে বলে


ধারণা করা হয় বংশগত সম্পর্কের ভিত্তিতেই তিনি একথা বলেছিলেন। তার পিতা খুওয়াইলিদ ইবন আসাদ ফিজার যুদ্ধে নিজের গোত্রের সেনাপতি ছিলেন। তার অনেক সন্তান ছিল। সন্তানদের মধ্যে খাদিজা ছিলেন দ্বিতীয়।


নবীজির সাথে বিবাহ

খাদিজার সাথে মুহাম্মদের বিবাহ নিয়ে বেশকিছু মতামত  প্রচলিত আছে। তবে সবাই একমত যে বিয়ের প্রস্তাব খাদিজা দিয়েছিলেন। একটি মতবাদ অনুসারে খাদিজা নিজেই মুহাম্মদ কে বিয়ের প্রস্তাব দেন।


কিন্তু মুহাম্মদ নিজের দরিদ্রতার অজুহাত দেখিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেন। তার ধারণা ছিলো গরীব হওয়ার জন্য খাদিজার বাবা এই বিয়ে মেনে নিবে না।


অবশেষে খাদিজার বাবা যখন অতিরিক্ত মদ্যপান করে মাতাল অবস্থায় ছিলেন, তখন খাদিজা যেয়ে বিয়ের অনুমতি আদায় করেন। মাতালবস্থা কেটে যাওয়ার পর খাদিজার বাবা সম্মতি তুলে নেন এবং বিয়েতে বাধা দান করেন। 


তারপর খাদিজা আবার তার বাবার সম্মতি আদায় করেন এবং মুহাম্মদ কে বিয়ে করেন।

অপর একটি মতবাদ অনুযায়ী, খাদিজার বান্ধবী ইয়ালার স্ত্রী নাফিসা বিনতে মানিয়া বিবাহের ব্যাপারে মধ্যস্থতা করেছেন। তিনি খাদিজার হয়ে মুহাম্মদ এর কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যান।


এরপর দুই পক্ষের সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়।

তাদের বিয়েতে আবু তালিব, হামযাহসহ অনেক বিশিষ্ট কুরাইশ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। সকলের সামনে বিয়ের খুৎবা প্রদান করেন আবু তালিব।


আরবী গদ্যসাহিত্যে এই খুৎবা এখনো বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। বিয়ের মোহরানা ছিলো ৫০০ স্বর্ন মুদ্রা। খাদিজা নিজেই দুই পক্ষের খরচাদি বহন করেন।


তিনি দুই উকিয়া সোনা ও রুপা মুহাম্মদ কে দেন , যেন তা দিয়ে উভয়ের পোশাক ও ওয়ালীমার (বৌভাত অনুষ্ঠান) আয়োজন করতে পারেন।


বিয়ের সময় খাদিজার বয়স ছিলো ৪০ বছর এবং মুহাম্মদ এর বয়স ছিলো ২৫ বছর।

মুলত মুহাম্মদ এর চারিত্রিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে খাদিজা তাকে বিয়ে করেন।


ইসলাম ধর্ম গ্রহণ

মুহাম্মদ (সা.) তৎকালীন আরবের সামাজিক অবক্ষয়, যুদ্ধ-বিগ্রহ, হিংসা, হানাহানি থেকে মানুষের মুক্তি কিভাবে হবে তা নিয়ে চিন্তা করতেন। ত্রিশ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পর মুহাম্মাদ প্রায়ই মক্কার অদূরে হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় কাটাতেন। 


তার স্ত্রী খাদিজা নিয়মিত তাকে খাবার দিয়ে আসতেন। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী এমনি একদিন ধ্যানের সময় ফেরেশতা জিবরাইল তার কাছে আল্লাহপ্রেরিত বাণী নিয়ে আসেন এবং তাকে কিছু পংক্তি দিয়ে পড়তে বলেন।


উত্তরে মুহাম্মাদ জানান যে তিনি পড়তে জানেন না, এতে জিবরাইল তাকে জড়িয়ে ধরে প্রবল চাপ প্রয়োগ করেন এবং আবার একই পংক্তি পড়তে বলেন। কিন্তু এবারও মুহাম্মাদ(সা.) নিজের অপারগতার কথা প্রকাশ করেন।


এভাবে তিনবার চাপ দেওয়ার পর মুহাম্মাদ(সা.) পংক্তিটি পড়তে সমর্থ হন। মুসলিমদের ধারণা অনুযায়ী এটিই কুরআনের প্রথম আয়াত গুচ্ছ; সুরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত।


বর্ণনায় আরও উল্লেখ আছে প্রথম বাণী লাভের পর মুহাম্মাদ এতই ভীত হয়ে পড়েন যে কাঁপতে কাঁপতে নিজ গৃহে প্রবেশ করেই খাদিজাকে কম্বল দিয়ে নিজের গা জড়িয়ে দেওয়ার জন্য বলেন।


বারবার বলতে থাকেন, "আমাকে আবৃত কর"। খাদিজা নবী (সা.) এর সকল কথা সম্পূর্ণ বিশ্বাস করেন এবং তাকে নবী হিসেবে মেনে নেন। ভীতি দূর করার জন্য মুহাম্মাদকে নিয়ে খাদিজা নিজ চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবন নওফেলের কাছে যান।


নওফেল তাকে শেষ নবী হিসেবে আখ্যায়িত করে। এভাবে খাদিজা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।


জীবন পরিচিতি

নাম: খাদিজা

উপাধি: মুবারাকাহ, তাহেরাহ, কুবরা।

উপনাম: উম্মে হিন্দ, উম্মুল মু‘মিনীন, উম্মে জাহরা।


পিতা: খুয়াইলিদ বিন আসাদ

মাতা: ফাতিমা বিনতে যাসেম

জন্ম তারিখ ও স্থান: নবুয়্যত ঘোষণার ৫৫ বছর পূর্বে মক্কায়।

রাসূলের (সা.) সাথে বিবাহের তারিখ: ১০ই রবিউল আউয়াল, নবুয়্যত ঘোষণার ১১ বছর পূর্বে।


মৃত্যু তারিখ ও স্থান: নবুয়্যত ঘোষণার দশম বছরে ১০ই রমজান মক্কাতে মৃত্যুবরণ করেন। প্রকৃতার্থে তিনি শেবে আবু তালিবে (আবু তালিব উপত্যকাতে) ৩ বছর বন্দী অবস্থায় তার উপর যে অত্যাচার ও নির্যাতন করা হয়েছিল সে কারণে বলা যেতে পারে তিনি শাহাদতবরণ করেছেন।


মৃত্যুকালীন বয়স: ৬৫ বছর

পবিত্র মাজার শরীফ: মোয়াল্লা নামক কবরস্থানে যার অপর নাম আবু তালিবের কবরস্থান।

রাসূলের (সা.) সাথে জীবন যাপন কাল: প্রায় ২৫ বছর।


সন্তানাদি: ত্রমানুসারে কাসিম, আবদুল্লাহ যার উপনাম তাহির ও তায়্যেব, রুকাইয়াহ, যায়নাব, উম্মে কুলসুম, ফাতিমা জাহরা (আলাইহুন্নাস সালাম)।


ঘোর অন্ধকারে উজ্জল নক্ষত্রের উদয়

আবর উপদ্বীপ মক্কায় প্রাচীন বংশধর কুরাঈশ বসবাস করতেন, পয়গাম্বরদের আদর্শ হতে দূরে থাকার কারণে, মূর্খের শাসন ও মূর্খতা এবং সে যুগের নোংড়া, অপবিত্র কার্যক্রমের ফলে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল যে, সেখানে আদর্শের কোন চিহ্নই ছিল না।


যা কিছু দেখা যেত তা শুধুই বৈষম্য, অত্যাচার, নোংড়ামী, মতভেদ, যুদ্ধ, রক্তপাত, হিংসা, স্বার্থপরতা, ছন্নছাড়া, এবং লাগামহীনের খবরাদি। এ রকম এক অন্ধকার পরিবেশে একটি আদর্শ দম্পতি (খুয়াইলিদ ও ফাতিমা) হতে এক উজ্জল নক্ষত্রের আবির্ভাব ঘটে।


এই উজ্জল নক্ষত্রটি হচ্ছে হযরত খাদিজা (সা.) যিনি রাসূলের (সা.) জন্মের ১৫ বছর পূর্বে (নবুয়্যত ঘোষণার ৫৫ বছর পূর্বে) জন্মগ্রহণ করেছিলেন।


তার জন্ম তারিখ যদিও নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই তবে তার মৃত্যু তারিখ প্রসিদ্ধ বর্ণনানুযায়ী নবুয়্যতের দশম বছরের রমজান মাসে আবু তালিবের মৃত্যুর ঠিক তিন দিন পর ৬৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।


 রাসূল (সা.) তাকে তার সন্তান হিন্দ-এর নামানুসারে উম্মে হিন্দ বলে ডাকতেন।


এই মহিয়সী নারী ৪০ বছর বয়সে রাসূলের (সা.) যাঁর বয়স তখন ২৫ বছর ছিল বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনিই প্রথম নারী ছিলেন যিনি ইসলামের উদয়ান্তে সর্ব প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।


২৫ বছর যাবৎ রাসূলের (সা.) সাথে যুগল জীবন যাপন করেন। এই দিনগুলিতে সর্বদা পরাক্রান্ত ও আত্মত্যাগী সাথী, দয়াশীল বন্ধু হিসেবে রাসূলের (সা.) সাথে ছিলেন।


তার সম্পর্কে হযরত আবু তালিব সেই অন্ধকার যুগে বলেছিলেন: খাদিজা (সা.) এমনই এক নারী যে সকল ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ, বরকত ও সৌন্দর্য্যে ভরপুর।


যার থেকে সব ধরনের অবজ্ঞা ও অপবাদ অনেক দূরে। সে এমনই নারী যে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও সম্মানিত।


সবচেয়ে আশ্চর্য্যের বিষয় হল: ইমাম হাসান (আ.) যার সৌন্দর্য্য বনী হাসিমের সবার নিকট উপমা হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। তিনি স্বয়ং এক বক্তব্যে বলেছেন:


“যখন আল্লাহ তায়ালা সবার চিত্রাঙ্কন করছিলেন আমিই সবচেয়ে বেশী তার সাথে অর্থাৎ হযরত খাদিজার (সা.) সাথে সদৃশ্য ছিলাম”।


ইসলামের পূর্বে ও পরে হযরত খাদিজার (সা.) পাঁচটি পদবী


হযরত খাদিজা (সা.) জন্মের পূর্বে, ঐশী গ্রন্থ ইঞ্জিল যা হযরত ঈসার (সা.) উপর অবতীর্ণ হয়েছিল তাতে “বরকতময় নারী ও বেহেশতে হযরত মরিয়মের (আ.) সাথী” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।


যেমন: যেখানে হযরত ঈসাকে (আ.) উদ্দেশ্য করে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বলা হয়েছে: তার বংশধর বরকতময় থেকে যিনি বেহেশতে তোমার মাতা হযরত মরিয়মের (আ.) সাথী।


যদিও অন্ধকার যুগে সচ্চরিত্র নারী খুবই কম ছিল ও অনেক নারীই সে যুগে অসৎ কর্মে লিপ্ত ছিল কিন্তু হযরত খাদিজা (সা.) সে যুগেও তার সর্বদিক থেকে পবিত্রতার জন্য “তাহেরাহ” অর্থাৎ পবিত্রা উপাধি অর্জন করেছিলেন।


তার ব্যক্তিত্ব সে যুগেও এত বেশী উচ্চ পর্যায়ে ও সম্মানের পাত্র ছিল যে, তাকে সবাই “সায়্যেদাতুন নেসাওয়ান” বা নারীদের সর্দারিনী বলে ডাকতেন। 

আরও পড়ুন  আল্লাহ তায়া’লা র ওপর ঈমান


সংক্ষিপ্তাকারে বলতে হয় যে, অন্ধকার যুগের নরীদেও মধ্যে হযরত খাদিজার (সা.) অবস্থান এতটাই প্রিয়ভাজন ও সম্মানিত ছিল যে, পূর্ণতা ও উচ্চ মর্যাদার ক্ষেত্রে ছিলেন অনুপম।


সে কারণেই বিবাহের পর রাসূল (সা.) তাকে “কুবরা” বা পরিপূর্ণ ও উচ্চাসন উপাধি দিয়েছিলেন।


দোয়া নুতবাতে যেমন বর্ণিত হয়েছে হযরত খাদিজাকে (সা.) “খাদিজাতুল গাররা” অর্থাৎ সম্ভ্রান্ত খাদিজা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।


হযরত খাদিজার (রাঃ) স্বপ্ন

রাসূলের (সা.) সাথে পরিণয় হওয়ার পূর্বে তিনি এক আশ্চর্যজনক স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্নের কথা তার চাচাতো ভাই ওরাকা বিন নওফলের কাছে বর্ণনা করেন।


তার স্বপ্নটি ছিল এ রকম যে, আকাশ হতে আমার কোলে একটি চাঁদ নেমে আসল এবং সেটা আবার সাত ভাগে বিভক্ত হল।


ওরাকা বিন নওফেল বলল: এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা হল শেষ যুগে এক রাসূলের আবির্ভাব ঘটবে এবং তার সাথে তোমার বিবাহ হবে। আর সেই বিবাহের ফলে তোমাদের থেকে সাতটি সন্তান জন্ম নিবে।


হযরত খাদিজার (সা.) অঢেল সম্পদ

খাদিজার (সা.) বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে একটি বৈশিষ্ট্য হল ব্যবসা-বাণিজ্যে ও অর্থনীতিতে চেষ্টা-প্রচেষ্টার মাধ্যমে তার যুগের সবচেয়ে ঢণাড্য ব্যক্তি ও দৃষ্টান্তহীন করে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন। তিনি ইসলামের পথে তার সমস্ত ধন-সম্পদকে ব্যয় করেছেন।


ইসলামের অগ্রগতি ও উন্নয়নের জন্য হযরত খাদিজার (সা.) সম্পদ ছিল অত্যন্ত জরুরী ও আবশ্যক। তার ধন-সম্পদ এতটায় উপকারে এসেছিল যে রাসূল (সা.) সে সম্পর্কে বলেছেন:


খাদিজার (সা.) সম্পদের মত অন্য কোন সম্পদই আমাকে এতটা লাভবান করেনি।


ঐতিহাসিকগণ হযরত খাদিজার (সা.) সম্পদকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করেছেন। তার সত্তর হাজার উট ছিল যেগুলোর মাধ্যমে ব্যবসার রসদপত্র দেশের আভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন স্থানে বহন করতেন।


তার বিশালাকার একটি গুদাম ঘর ছিল যে ঘরের উপরে সবুজ রেশমী কাপড়ের তৈরী সাইন বোর্ড ঝুলানো ছিল। সে ঘরটি ছিল বিভিন্ন ধরনের মাল সম্পদে ভরপুর।


তার অনেকগুলি দাস-দাসী বা কর্মচারী ছিল যারা তার ব্যবসার রসদপত্র বিভিন্ন দেশে আমদানী বা রপ্তানী করতো।


হযরত মুহাম্মদের (সা.) এর সাথে সাক্ষাত ও বিবাহের প্রস্তাব


হযরত মুহাম্মদ (সা.) যখন ব্যবসার কাজে মক্কা থেকে শামে (সিরিয়া) গিয়েছিলেন, তখন খাদিজার সাথে তাঁর পরিচয় হয়েছিল এবং তাঁর সাথে ব্যবসা বাণিজ্যের কাজ শুরু করেন।


খাদিজা (সা.) হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর আখলাক ও চরিত্র দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং তাঁর স্বপ্নের সাথে সব মিলে যাচ্ছিল। খাদিজা মুহাম্মদ (সা.) কে ডাকলেন এবং তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন।


কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (সা.) এই প্রস্তাবে একটু চিন্তিত হলেন। কারণ, হযরত খাদিজা ছিলেন ধনী এবং তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষ তেমন ধন-সম্পদ ছিল না।


হযরত মুহাম্মদ (সা.) খাদিজার প্রস্তাবের কথা তাঁর চাচা আবু তালেবকে বললেন। আবু তালেব এই প্রস্তাবের কথা অত্যন্ত খুশি হলেন এবং রাজী হলেন।


হযরত খাদিজা ও মুহাম্মদ (সা.) এর বিয়ে অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করলেন। খাদিজার নিবিড় ভালবাসাকে মুহাম্মদ (সা.) উপলগ্ধি করেছিলেন এবং তিনি হৃদয়ে উপলগ্ধি করলেন যে, আকাশ থেকে শব্দ এলো ও বলল: “নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র নারীকে পবিত্র ও সত্যবাদী স্বামী দান করে থাকেন।”


তখন তাদের চোখের সামনে থেকে পর্দা সড়ে যায় এবং বেহেস্তের হুরগুলো যে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল তা অবলোকন হয় এবং আতরের গন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে আর সবাই বলতে থাকে যে, এত সুন্দর সুগন্ধ এই সততা থেকেই উৎসারিত হয়েছে।


অভিযোগকারী নারীদের প্রতি হযরত খাদিজার (সা.) উপযুক্ত জবাব


কুরাইশ বংশের একদল ত্রুটি অন্বেষকারী মূর্খ নারী হযরত খাদিজা (সা.) সম্পর্কে অভিযোগ ও উপহাস করতে লাগল।


তারা উপহাস করে বলতো: ‘খাদিজার মত একজন প্রসিদ্ধ ও উচ্চ মর্যাদার অধিকারী বিত্তশালী নারীর এটা মানায় না যে একজন ইয়াতীম, রিক্তহস্ত, দরিদ্র ব্যক্তিকে বিয়ে করবে আর এটা কি নেক্কারজনক একটা বিষয় নয় ?


যখন এই কথাটি হযরত খাদিজার (সা.) কানে পৌঁছালো তিনি তার কর্মচারীদেরকে সুস্বাদু খাবার তৈরীর নির্দেশ দিলেন।


আর ঐ সকল নারীদেরকে দাওয়াত করলেন। যখন সবাই আহারে ব্যস্ত তখন হযরত খাদিজা (সা.) তাদের উদ্দেশ্যে বললেন:


হে নারী সমাজ !

তোমরা নাকি হযরত মুহাম্মদকে (সা.) বিয়ে করার বিষয়কে কেন্দ্র করে আমাকে উপহাস করছো। আমি তোমাদের কাছে জানতে চাই:


‘হযরত মুহাম্মদের (সা.) মত ঐ ধরনের ভাল বৈশিষ্ট্যের অধিকারী দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি কি তোমাদের নজরে আছে ?


মক্কা ও মদীনার আশে পাশে এমন ব্যক্তিত্ববান কেউ কি আছে যিনি হযরত মুহাম্মদের (সা.) মত চরিত্র ও মর্যাদার দিক থেকে এত সৌন্দর্য্যপূর্ণ এবং পরিপূর্ণতার অধিকারী ?


আমি তার এই পূর্ণতার কারণেই তাকে বিবাহ করেছি, আর এমন কিছু তার সম্পর্কে শুনেছি ও দেখেছি যা অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদার অধিকারী।


সুতরাং এটা উচিত নয় যে, তোমরা যা খুশি তাই বলবে ও অজ্ঞতাবশে কাউকে অশোভনীয় অপবাদ দিবে।’


হযরত খাদিজার (সা.) এ ধরনের হৃদয়গ্রাহী কথা শুনে সমস্ত নারীরা নিস্তব্ধ হয়ে গেলেন। তাদের এই নিস্তব্ধতা তারই সাক্ষ্য বহন করে যে, এ সম্পর্কে তাদের আর বলার মত কোন ভাষা নেই।


হযরত খাদিজা (সা.) এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বুদ্ধিমত্তার সাথে ও আল্লাহর সন্তুষ্টচিত্তে তাদের কৃতকর্মের জবাব দিয়েছিলেন।


হযরত আদমের (আ.) এর বাণী

হযরত খাদিজার (সা.) কৃতিত্ব বা মর্যাদার কথা বিশ্বের প্রথম মানব হযরত আদমের (আ.) সময় অর্থাৎ হযরত খাদিজার (সা.) জন্মেরও বহু শতাব্দী পূর্বে আলোচিত একটি বিষয় ছিল।


(হযরত আদম (আ.) হতে বর্ণিত) তিনি বলেছেন: কিয়ামতের দিন আমি সকল মানবজাতির সর্দার ও নেতা, কিন্তু এমন এক ব্যক্তি আসবে যিনি আমারই সন্তানগণের মধ্য থেকে আর তিনি রাসূলগণের মধ্যেও একজন রাসূল যার নাম মুহাম্মদ তিনি দু‘দিক থেকে আমার চেয়েও বেশী মর্যাদার অধিকারী:


তার স্ত্রীর ক্ষেত্রে যিনি ছিলেন তার সর্বোত্তম সঙ্গী কিন্তু আমার স্ত্রী হাওয়া সে ধরনের ছিল না।


তিনি পরিপূর্ণভাবে অশুভ আত্মার উপর কর্তৃত্বের অধিকারী (এমন কি তারকে আউলা পর্যন্ত আঞ্জাম দেন নি) কিন্তু আমি ঐ রকম নই।


ধন-সম্পদের ব্যয়ক্ষেত্র

রাসূল (সা.) বলেছেন: “দুনিয়ার কোন ধন-সম্পদই আমাকে এতটা লাভবান করেনি যতটা খাদিজার সম্পদ করেছে।” এমতাবস্থায় এ প্রশ্ন মনে ভেসে উঠতে পারে যে, রাসূল (সা.) খাদিজার (সা.) এই অঢেল সম্পদকে কোন পথে কিভাবে ব্যয় করলেন ?


এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে রাসূল (সা.) খাদিজার (সা.) সম্পদ হতে ঋণগ্রস্থদের ঋণমুক্ত করার কাজে, রিক্তহস্তদেরকে সাহায্যের কাজে, ইয়াতীমদের প্রতিপালনের কাজে, মুসলমানরা যারা মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করত।


মুশরিকরা তাদের মাল-সম্পদকে লুট করত, রাসূল (সা.) তাদেরকে খাদিজার (সা.) সম্পদ থেকে সাহায্য করতেন যাতে তারা মদীনায় পৌঁছতে পারে। এক কথায়, রাসূল (সা.) যেভাবে ভাল মনে করতেন সেভাবে হযরত খাদিজার (সা.) সম্পদকে ব্যয় করতেন।


স্বামীর প্রতি হযরত খাদিজার (সা.) সহমর্মীতা

রাসূল (সা.) নবুয়্যত ঘোষণার প্রাক্কালে এক সাড়া জাগানো স্বপ্ন দেখেছিলেন ও খাদিজার (সা.) নিকট এসে এভাবে বর্ণনা করলেন:


আমি স্বপ্নে দেখলাম আমার পেটের ভুরিকে স্বস্থান হতে সরে আনা হয়েছে। অতঃপর সেটাকে ধৌত ও পবিত্র করা হয়েছে এবং আবার সেটাকে স্বস্থানে রাখা হয়েছে।


হযরত খাদিজা (সা.) রাসূলের (সা.) স্বপ্নের কথা শুনে বললেন: ‘আপনার এই স্বপ্ন অতি উত্তম ও সৌভাগ্যের চিহ্ন বহন করে, আপনাকে সম্ভাষণ জানায়, আল্লাহ আপনার প্রতি কল্যাণ ব্যতীত কিছু করেন না ‘


হযরত খাদিজা (সা.) এরূপ পরিস্থিতেও রাসূলের (সা.) সহচর, বন্ধু, বিশ্বস্ত সাথী ও দূর্দিনে সহমর্মী ছিলেন।


যে কোন দূর্ঘটনা যেটা রাসূলের (সা.) অশান্তি বা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতো, আল্লাহ তায়ালা হযরত খাদিজার (সা.) মাধ্যমে সেই অশান্তি বা দুশ্চিন্তা দূর করে দিতেন এবং হযরত খাদিজাও (সা.) তাঁর কষ্ট দূর করে দিয়ে তাঁকে প্রশান্তি দান করতেন।


হযরত খাদিজার (সা.) এই কর্মসূচীটি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।


ব্যবসায়ী খাদিজা (রাঃ)

হযরত খাদিজা (সা.) রাসূলের (সা.) সাথে পরিণয় হওয়ার পূর্বেও আরবদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ঢণাড্য হিসেবে পরিচিত ছিলেন।


তার প্রায় সত্তর হাজার উট ছিল ও বাণিজ্য কাফেলাগুলি দিবা-রাত্রি তায়েফে, ইয়েমেনে, শামে (সিরিয়ায়), মিশরে এবং অন্যান্য রাষ্ট্রে বাণিজ্যিক লেন-দেন করতো, তার অনেকগুলি ক্রীতদাস ছিল যারা তার ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল।


হযরত খাদিজার (সা.) বিস্ময়কর আত্মত্যাগসমূহের মধ্যে একটি হচ্ছে রাসূলের (সা.) সাথে বিবাহের পর ইসলাম পূর্ব ও ইসলাম পরবর্তী যত সম্পদ ছিল সমস্ত সম্পদ রাসূলের (সা.) অধীনে দিয়ে দিয়েছিলেন যাতে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে তিনি সেগুলিকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে পারেন।


এমন অবস্থা দাঁড়ালো যে, রাসূল (সা.) দরিদ্র অবস্থা থেকে সম্পদশালী অবস্থাতে রূপান্তরিত হলেন এবং আল্লাহ তায়ালা তাঁর অনূগ্রহের অবদান সম্পর্কে রাসূলকে (সা.) উদ্দেশ্য করে বলতে গিয়ে এভাবে আয়াত অবর্তীর্ণ করেন:


আল্লাহ আপনাকে অভাবী অবস্থায় পেয়েছেন অতঃপর অভাবমুক্ত করেছেন। বর্ণনানুসারে অর্থাৎ হযরত খাদিজার (সা.) সম্পদের মাধ্যমে আপনাকে অমুখাপেক্ষী করেছেন।


হযরত খাদিজার (সা.) ঊরশে হযরত ফাতিমার (সা.) বিস্ময়কর জন্ম

হযরত খাদিজার (সা.) স্বর্ণোজ্জল ঘটনাসমূহের মধ্যে একটি শিক্ষণীয় ও বিস্ময়কর ঘটনা হল হযরত ফাতিমার (সা.) জন্মের ঘটনা।


এদিক থেকে হযরত খাদিজা (সা.) সে যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন যাতে হযরত ফাতিমার (সা.) মত এমন একটি সন্তানকে যিনি ইহকাল ও পরকালের সর্বোত্তম নারী, সৃষ্টির প্রারম্ভ হতে সর্বশেষ পর্যন্ত এমন কোন নারীই তার (ফাতিমার) মর্যাদায় পৌঁছাতে পারবে না, জন্ম দিতে পারেন।


মায়ের উদরে হযরত ফাতিমার (সা.) নূরের বিচ্চুরণ ও তার জন্মের ঘটনার বিষয়ে মুহাদ্দিসরা বিভিন্নভাবে বিপুল সংখ্যক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তার একটি উদাহরণ এখানে উল্লেখ করবো।


তাফসীরে ফোরাতে আমিরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন_ যখন এই আয়াতটি রাসূলের (সা.) উপর অবতীর্ণ হল_ ‘তারাই যারা ঈমান ও উত্তম আমলের অধিকারী তারা পবিত্রতম জীবন ও সর্বোত্তম পরিণতির অধিকারী।’


তখন একজন সাহাবী অর্থাৎ মিকদাদ রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাস করলেন_ ‘হে আল্লাহর রাসূল এই আয়াতে ‘তুবা‘ এর উদ্দেশ্য কি ? 


রাসূল (সা.) বললেন-‘তুবা হচ্ছে বেহেশতের একটি বৃক্ষ যা এত বড় ও বিসতৃত যে, কেউ যদি ঘোড়ায় সাওয়ার হয়ে এই বৃক্ষের ছায়ায় পরিভ্রমণ করে তাহলে একশত বছরেও তা সম্পন্ন করতে পারবে না।’


সালমান ফারসী হতে বর্ণিত তিনি বলেছেন- রাসূল (সা.) হযরত ফাতিমাকে (আ.) অত্যন্ত পছন্দ করতেন। রাসূলের (সা.) একজন স্ত্রী বললেন- হে আল্লাহর রাসূল (সা.) আপনি কেন ফাতিমাকে (আ.) এত বেশী ভালবাসেন ?


যা অন্যকোন সন্তানকে এতটা ভালবাসেন না ?

রাসূল (সা.) তার জবাবে বললেন- যখন আমি শবে মেরাজে (উর্ধগমনের রাত্রিতে) ভ্রমণ করেছিলাম, জিব্রাঈল (আ.) আমাকে তুবা বৃক্ষের নিকট নিয়ে গিয়েছিল, সেই বৃক্ষ থেকে একটি ফল ছিঁড়ে আমাকে দিয়েছিল।


যা আমি খেয়েছিলাম, অতঃপর তার হাত দু‘টি আমার কাঁধের মধ্যভাবে বুলিয়ে দিলেন ও বললেন- হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ তায়ালা হযরত খাদিজার (সা.) মাধ্যমে হযরত ফাতিমার (আ.) জন্মের সুসংবাদ দিচ্ছেন।


যখন মিরাজ হতে এই ধরণীতে ফিরে আসলাম ও হযরত খাদিজার (সা.) ঘরে রাত যাপন করলাম তখন খাদিজার উদরে ফাতিমার নূর প্রতিস্থাপিত হল।


এরপর থেকে যখনই বেহেশতের কথা চিন্তা করতাম তখনই ফাতিমাকে কাছে ডেকে নিতাম ও তার কাছ থেকে বেহেশতের সুগন্ধ নিতাম। কারণ, সে হাউরায়ে ইনসিয়্যাহ অর্থাৎ (এই ধরাতে) মানবরূপে বেহেশতী নারী।


হযরত খাদিজার (রাঃ) মৃত্যু

যদিও ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে, হযরত খাদিজা (সা.) দ্বীনের টানে; এই পথে প্রতিরোধ গড়ে তোলার মাধ্যমে প্রায় তিন বছর অথবা চার বছর রাসূল (সা.) ও বনী হাশিম গোত্রের সাথে শেবে আবু তালিবে অর্থনৈতিক অবরোধের স্বীকার হয়েছিলেন।


উল্লেখ্য যে, এ সময় হযরত খাদিজার (সা.) বয়স ছিল প্রায় ৬৩ অথবা ৬৫ বছর অর্থাৎ বৃদ্ধাবস্থায় উপনীত হয়েছিলেন। অবরোধের সময় তিনি অত্যন্ত দৈহিক ও মানসিক চাপের মুখে নিপতিত হয়েছিলেন।


বিশেষ করে যারা বয়োঃবৃদ্ধ ছিলেন যেমন হযরত আলীর (আ.) পিতা হযরত আবু তালিব ও খাদিজা (সা.) তারা অধিক ভেঙ্গে পড়েছিলেন।


তাদের এই আত্মত্যাগের কারণেই তারা আজও ঐতিহাসিকভাবে জীবিত, তাছাড়াও অবরোধের কঠিন মুহূর্ত এক ধরনের নির্যাতন ও ধুকে ধুকে মরার মত অবস্থা ছিল এবং যাদেরকে অবরোধ করা হয়েছিল তারা প্রায় তাদের ধৈর্য্য ও সহ্য ক্ষমতা প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলেন।


এক্ষেত্রে বর্ণনানুসারে, যখন মুশরিকরা অবরোধের সমাপ্তি ঘোষণা করল, তার কিছু দিন যেতে না যেতেই হযরত আবু তালিব ও হযরত খাদিজা (সা.) মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তারা মারা যান নি বরং প্রকৃতার্থে তারা শাহাদতবরণ করেছেন।


মহামূল্যবান গ্রন্থ আল-গাদীরে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, আবু তালিব নবুয়্যত ঘোষণার দশম বছওে ১৫ই শাওয়াল মাসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আর ঠিক তার ৩৫ দিন পর হযরত খাদিজা (সা.) মৃতু্রবণ করেন।


এই দুই বিশ্বস্ত সঙ্গীর মৃত্যুর কারণে রাসূল (সা.) অত্যন্ত দুঃখ-কষ্ট পেয়েছিলেন। সে কারণেই তিনি এই বছরকে আমুল হুজুন বা দুঃখ-কষ্টের বছর নামে নামকরণ করেছেন।


প্রসিদ্ধ হাদীসানুসারে, হযরত খাদিজা (সা.) নবুয়্যত ঘোষণার দশম বছরের ১০ই রমজান মাসে মৃত্যুবরণ করেন।


আল্লামা তাবারসী (র.) লিখেছেন- হযরত খাদিজা (সা.) ও হযরত আবু তালিবের মৃত্যু রাসূলের (সা.) জন্য ছিল দু‘টি মর্মান্তিক ঘটনা। এই ঘটনাটি এতটাই মর্মান্তিক ছিল যে, রাসূল (সা.) অত্যন্ত অশান্তি ও অস্বস্তিবোধ করছিলেন।


আল্লামা মজলিসীর বর্ণনানুসারে, রাসূল (সা.) এ সময়ে (তাদের মৃত্যুর পর) গৃহে অবস্থান করা আরম্ভ করলেন। তিনি খুব কমই গৃহের বাইরে আসতেন।


আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত খাদিজার (সা.) কাফনের কাপড় আসা

আল-খাসায়েসুল ফাতিমিয়্যাহ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, প্রসিদ্ধ বর্ণনানুযায়ী বলা হয়েছে- যখন হযরত খাদিজা (সা.) ইন্তেকাল করেন।


তখন আল্লাহর রহমতের ফেরেশতা তাঁর পক্ষ থেকে হযরত খাদিজার (সা.) জন্য রাসূলের (সা.) নিকট কাফনের বিশেষ কাপড় নিয়ে এসেছিলেন।


রাসূল (সা.) হযরত খাদিজার (সা.) পবিত্র দেহ মোবারক ঐ কাফনের কাপড় দ্বারা কাফন পড়ালেন।


অতঃপর সঙ্গী-সাথীদেরকে নিয়ে তার লাশকে কবরস্থানে মোয়াল্লার দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন যাতে তাঁর (সা.) মাতা হযরত আমিনার পাশে কবরস্থ করতে পারেন।


সেখানে হযরত খাদিজার (সা.) জন্য একটি কবর তৈরী করা হল ও রাসূল (সা.) সেই কবরের ভিতওে নামলেন এবং শুয়ে পড়লেন অতঃপর বাইরে বেড়িয়ে আসলেন। তারপর হযরত খাদিজার (সা.) দেহ মোবারককে দাফন করলেন।


ভূমিকা : লিখতে গিয়ে যদি ভূল হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

এবং কোন সাজেশন এর প্রয়োজন হলে আমাকে ইমেইল এর মধ্যেমে জানিয়ে দিবেন !

প্রতিদিন এই ওয়েবসাইট ভিজিট করুন ।

ভালো লাগলে শেয়ার করবেন,

সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।

Please Do,not Share Any Spam Links

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post