হিদায়াত | ইসলামিক কাহিনী, islamic golpo

 

হিদায়াত | ইসলামিক কাহিনী, islamic golpo

হিদায়াত

মিসেস আদিবা ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে পবিত্র কোরআনের সূরা মূলক এর অনুবাদ এবং তাফসির পড়ছিলেন।এমন সময় তার ছোট মেয়ে ফাতিমা মায়ের কাছে এলো। তার বয়স এখন পাঁচ বছর। মায়ের কাছে এসেই ফাতিমা মাকে জিজ্ঞাসা করল, "আম্মু দেখো, আমি হিজাব পরেছি। দেখতো তোমার মত হয়েছে কিনা? "মেয়ের প্রশ্ন শুনে আদিবা মেয়ের দিকে তাকালেন।

দেখলেন মেয়ে মস্ত এক হিজাব পড়েছে যেটা পড়ে তিনি বাইরে যান। সেই সাথে আবার একটা নেকাব পরেছে। অপটু হাতে পরায় তার চোখটাও যেন দেখা যাচ্ছে না। মিসেস আদিবা মেয়ের এই কান্ড দেখে না হেঁসে পারলেন না। হাতের তাফসির বইটা টেবিলে রেখে মেয়েকে কোলে বসালেন। আর বললেন, "মাশাআল্লাহ আমার মেয়েকে তো রানীর মত লাগছে।

"এমন সময় তার বড় ছেলে কলেজে যাওয়ার জন্য বাইরে যাচ্ছে। তিনি ছেলেকে বললেন, "আব্দুল্লাহ বাইরে বেরোনোর দোয়া পড়ে বাইরে যাও। এতে আল্লাহ তোমাকে হেফাজত করবেন ইনশাআল্লাহ। আর শোনো সুযোগ পেলে জোহরের নামাজ সঠিক সময়ে আদায় করে নিবে "।ছেলে আবদুল্লাহ ইনশাল্লাহ বলে মায়ের কথার জবাব দিল।

এরপর বাইরে চলে গেলে মেয়ে ফাতিমা ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে মায়ের কাছে এলো। মায়ের কোলে বসে মাকে জিজ্ঞাসা করল, "আচ্ছা আম্মু তুমি সব সময় আমাদের এত কিছু শিখিয়ে দাও কেন? "মেয়ের প্রশ্নের জবাবে মিসেস আদিবা বললেন, "আমি যদিও তোমাদের ভালো মন্দ, ন্যায় অন্যায় শিখিয়ে না দেই তবে তোমাদের কে শিখিয়ে দেবে? তোমরা তো বুঝতে পারবে না কোনটা ভাল আর কোনটা খারাপ। এই কারণে তোমরা খারাপ কাজ করবে।

ফলে আল্লাহ তোমাদের উপর রাগ করবেন। সেই সাথে আমার উপরে। মেয়ে জিজ্ঞাসা করল, "আল্লাহ রাগ করলে কি হয়? "মিসেস আদিবা বল্লেন আল্লাহ রাগ করলে আল্লাহ অনেক শাস্তি দেন।তবে আমরা যদি ভাল কাজ করি,তবে আল্লাহ আমাদের সবাই কে অনেক ভালবাসবে।অনেক চকলেট দিবে,অনেক ভালবাসবে।বুঝলে?" মায়ের উত্তরে মেয়ে খুশি হয়ে গেল।খুশি হয়ে মাকে বলল,"তাহলে আমরা সবসময়ই ভালভাবে থাকব।

"মিসেস আদিবা ইনশাআল্লাহ বলে মেয়ের কথা সমর্থন করলেন। এরপর ফাতিমা নিজের খেলার ঘরের দৌড়ে চলে গেল। মিসেস আদিবা এবার একটা গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হলেন। নিজের মনে বলতে লাগলে, " আসলেই তো। একজন মানুষকে সঠিক পথ প্রদর্শনের ক্ষেত্রে মা-বাবার অনেক ভূমিকা থাকে। এই সব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে সন্তান দিন, আকলাক জ্ঞান ও মানে প্রকৃত মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে। ইসলামিক কাহিনী, islamic golpo

এইসব কথা ভাবতে ভাবতেই তিনি চলে গেলেন নিজের শৈশবের স্মৃতির পাতায়। উনার বয়স যখন চার পাঁচ তখন উনার মা উনার কে নাচের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন।কারণ উনার মায়ের মাঝে নাচের প্রতি এক্তা সুপ্ত ভালবাসা ছিল।সেই সাথে বাবা তাকে ভর্তি করবলেন গানের স্কুলে।নাচ গান নয়ে ব্যস্ত থেকে কেটে গেল ওনার শৈশব। অথচ তখন তিনি সঠিকভাবে কুরআন তিলাওয়াত শেখেন নি।

অবশ্য দাদির কাছে কিছু সুরা শিখেছিলেন।পাশাপাশি ওনার বড় চাচী রোকসানা বেগম এর কাছ থেকে কিছু কুরআন তেলাওয়াত শিখেছিলেন তবে তাতে তিনি খুব বেশি দক্ষ হয়ে ওঠেন নি। ওনার বয়স যখন 12 তখন আয়েশা চাচি একবার ওনার মা কে বলেছিলেন, "কিগো, শায়লা! তোমার মেয়েকে এখনো সঠিকভাবে নামাজ শেখাওনি? ওতো সময়মত নামাজ আদায় করে না। "সেদিন ওনার মা চাচি কি বলেছিলেন, "বড় হলে পড়বে। এখনো তো ছোট। islamic story bangla

"তিনি কখনো নামাজ পড়তেন আবার কখনো পরতেন না। উনার মা-বাবা ও এমনটাই ছিল। তবে রমজান আসলে মা-বাবা দুজনেই রোজা রাখতেন। মাঝে মাঝে তিনি ও রোজা রাখতেন।তবে পড়াশোনার চাপের কারণে ওনার মা ওনাকে রোজা রাখার জন্য খুব বেশি তাগাদা দিতেন না। বরং পড়ালেখা চেয়ে বেশি priority দিতেন।ছোটবেলা থেকেই তিনি কখনও মাকে পর্দা করতে দেখেননি।

দেখেছেন তাকে সেজেগুজে বাইরে যেতে, অনুষ্ঠান বা যেকোনো প্রোগ্রামের যেতে। তাই তিনিও এর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেননি। বরং ওনার কাছে মনে হতো যারা পর্দা করে তারা বুঝি সেকেলে হয়। এভাবেই করে তিনি নবম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হলেন। এই শ্রেনিতে তার জীবনে মরিয়ম নামে একটি নতুন মেয়ের সাথে পরিচয় হয়। প্রথম দেখাতেই মিসেস আদিবার মরিয়মকে অনেক ভাল লেগেছিল।

মরিয়ম কে দেকতে যেমন মিষ্টি ছিল ব্যবহার ছিল নম্র।মিসেস আদিবার এই দীর্ঘসময়ের স্কুল জীবনে তেমন কোনো ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ছিলোনা। তাই তিনি খুব সহজেই মরিয়ম এর সাথে বন্ধুত্ব করে ফেললেন। মরিয়ম আদিবাকে নানা কাজে নানাভাবে সাহায্য করতেন, অনুপ্রেরণা যোগাতেন।মরিয়ম পড়াশোনাতেও খুব অসাধারণ ছিলেন সেইসাথে আদিবা ও। দুইজনের খুব ভালো জুটি হলো।

মরিয়মের আরও একটি বিশেষ গুণ ছিল। তিনি খুব সুন্দরভাবে এবং ধৈর্যের সাথে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিতে পারতেন এবং নিজের জীবনে ও তার যথাসাধ্য মেনে চলার চেষ্টা করতেন। তার এই সুন্দর স্বভাবের অংশ হিসেবে তিনি মিসেস আদিবাকেও নানা সময় নানা ভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বাণী শোনাতেন।

মিসেস আদিবা এইসব কথা কখনো শুনতেন, কখনো শুনতেন না। মাঝে মাঝে ভীষণ বিরক্ত হতেন মরিয়ামের উপর। কিন্তু মরিয়ম কখনোই মিসেস আদিবার সাথে রাগ করতেন না। বরং তিনি খুব সুন্দর সাবলীল ভাষায় এবং মিষ্টি কথায় তার কাজ করতেন। এভাবে চলে গেল আড়াই বছর। এরইমধ্যে এসএসসি পরীক্ষা হয়ে গেল। মরিয়ম এবং আদিবা একই সাথে একই কলেজে উত্তীর্ণ হলেন।

আবারো একই সাথে থাকতে পেরে তারা দুজনেই ভীষণ খুশি হলেন।নতুন শ্রেণী নতুন পরিবেশ সবকিছু নতুন হলেও মরিয়ম কিন্তু আগের মতোই রয়ে গেলেন। কিন্তু মিসেস আদিবা নিজের মধ্যে অন্যরকম এক পরিবর্তন অনুভব করতে লাগলেন। তিনি যখনই একা কাজের ফাঁকে বসে থাকতেন তখনই তিনি এই পরিবর্তন বুঝতে পারতেন। আগে একা বসে থাকলে বিরক্ত হতেন কিন্তু এখন আর একা বসে থাকলে বিরক্ত হন না।

বরং তাঁর মনে হয় তিনি তো একা নন। তার মহান রব্ যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন তিনি তো সবসময় তাকে দেখছেন। তার মনের না বলা কথাগুলো শুনতে পাচ্ছেন.। তিনি তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতেন আর ভাবতেন কত সুন্দর তার মহান রবের সৃষ্টি! মাঝে মাঝে তার দুই চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়তো। তিনি বুঝতে পারতেন না কেন তিনি কাঁদছেন। কলেজের সিঁড়ি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় উঠোনে তারা পদার্পণ করলেন।

কিন্তু তখন মরিয়ম এবং আদিবা আর একসাথে ছিলেন না। তবে এই দূরত্ব তাদের বন্ধুত্বের বন্ধনকে ছিন্ন করতে পারেনি। তাদের প্রায়ই যোগাযোগ হতো। তখন মিসেস আদিবা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী, একদিন সকাল সাতটায় উনার ফোনে একটা কল আসে। তিনি ফোনটা হাতে নিতেই দেখলেন মরিয়ম। তিনি ভীষণ খুশি হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি মরিয়মকে বেশ কয়েক দিন ধরে ফোন করতে চাইছিলেন কিন্তু সুযোগ হচ্ছিল না।

তাই এখন মরিয়ামের ফোন দেখে বিলম্ব না করে কলটা রিসিভ করলেন। রিসিভ করা মাত্রই অপরপ্রান্ত থেকে মরিয়ামের আম্মার কান্না ভরা কন্ঠ শুনতে পেলেন। তিনি বলছিলেন, " আমার মরিয়ম আর নেই আজ সকাল ছয়টায় হঠাৎ করেই মরিয়ম চলে গেছে না ফেরার দেশে। " খবরটা শুনে আদিবা প্রায় আধঘণ্টা বাকরুদ্ধ ছিলেন।কথা বলতে পারছিলেন না। কিভাবে সম্ভব এটা? পরক্ষণেই তিনি চিন্তা করলেন এটাই তো বাস্তবতা।

তিনি তো এইমাত্র বললেন, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আমরা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে এবং তার কাছেই ফিরে যাব। কেউ আগে আবার কেউ পরে। কেউ আল্লাহর প্রতি ঈমান ও ভালবাসার উপর, আবার কেও পৃথিবী ত্যাগ করে তার অবাধ্যতার উপর।কিন্তু যেতে হবে এটাই সঠিক। ইসলামিক কাহিনী, islamic golpo

এইসব কথা চিন্তা করতে করতে আজ 21 বছর পরেও মিসেস আদিবার চোখ ভিজে গেল। তিনি নিজের মনে বলতে লাগলেন বর্তমান সমাজের মা-বাবা তাদের সন্তানের সুন্দর ক্যারিয়ার তৈরির পেছনে, তাদের সফল করার উদ্দেশ্যে কত কিছুই না করেন। অথচ তাদের অনেকেই সফলতার প্রকৃত definition তাই জানেন না। মহান আল্লাহ বলেন, "সেই ব্যক্তি সফল জাগে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়ে জান্নাতে দেওয়া হবে।" এটাই সফলতার প্রকৃত definition। তবে এই সফল সবাই হতে পারে না। আল্লাহ যাদের হেদায়েত করেন কেবল তারাই পারে।

Read more: আল্লাহ তা‘আলার ওপর ঈমান

ভূমিকা : লিখতে গিয়ে যদি ভূল হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন !

এবং কোন সাজেশন এর প্রয়োজন হলে আমাকে ইমেইল এর মধ্যেমে জানিয়ে দিবেন !

ভালো লাগলে দয়াকরে শেয়ার করবেন । সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।

Please Do,not Share Any Spam Links

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post