মক্কা বিজয় এর ইতিহাস - মুসলমানদের মক্কা বিজয় এর কাহিনী - Mkkha bijoy ar etihas


মক্কা বিজয় এর ইতিহাস, মুসলমানদের মক্কা বিজয় এর কাহিনী - Mkkha bijoy ar kahini

মক্কা বিজয় এর কাহিনী

শান্তি, সম্প্রীতি, মৈত্রী, সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলাম, মানবতার জন্য ইসলাম, সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণের জন্য ইসলাম।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আগমনের পর দ্বিতীয় হিজরিতে কুরাইশরা মদিনা আক্রমণ করলে বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

এতে চরমভাবে পরাজিত হলেও পঞ্চম হিজরি সনের ১৫ শাওয়াল শনিবার তারা প্রায় পাঁচ শ কিলোমিটার দূরে এসে পুনরায় মদিনা আক্রমণ করে, সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক ওহুদের যুদ্ধ।

ওমরাহর উদ্দেশ্যে মক্কা যাত্রা করলেন

ষষ্ঠ হিজরির জিলকদ মাসে নবীজি (সা.) ওমরাহর উদ্দেশ্যে মক্কা যাত্রা করলেন। কুরাইশরা বাধা দিলে হজরত মুহাম্মদ (সা.) হুদায়বিয়া নামক জায়গায় অবস্থান করেন। 


এখানেই সম্পাদিত হয় ইতিহাসে ‘হুদায়বিয়ার সন্ধি’ নামে বিখ্যাত বিশ্বের প্রথম লিখিত সন্ধি চুক্তি।

এ সন্ধি অনুযায়ী মক্কার ‘বনু খোজা’ সম্প্রদায় হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর সঙ্গে এবং ‘বনু বকর’ সম্প্রদায় কুরাইশদের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি করে। এ দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে পূর্বশত্রুতা ছিল।


কুরাইশদের প্ররোচনায় বনু বকর গোত্রের আবাসভূমি ‘ওয়াতির’–এর নিভৃত পল্লিতে রাতের অন্ধকারে অতর্কিত হামলা করে অসহায় নারী, শিশুসহ নির্বিচারে হত্যা ও লুণ্ঠন করে।

প্রাণের ভয়ে কাবায় আশ্রয় নেওয়া নিরীহ মানুষকেও তারা হত্যা করে। এ ঘটনার প্রতিকারের জন্য খোজা সম্প্রদায় মদিনার মিত্র মুসলমানদের সহযোগিতা চায়।

উপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাও

হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতিকারের জন্য দূত মারফত মক্কার কুরাইশ নেতাদের জানালেন, তোমরা বনি খোজা গোত্রকে উপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাও; নয়তো বনু বকর গোত্রের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি বাতিল করো,

না হলে হুদায়বিয়ার সন্ধির শর্ত লঙ্ঘন হয়েছে বলে এ চুক্তি বাতিল হয়েছে বলে পরিগণিত হবে। কুরাইশ নেতারা তৃতীয় পন্থাই গ্রহণ করলেন।

বিশ্বমানবতার কেন্দ্রভূমি মক্কা

অষ্টম হিজরিতে বিশ্বমানবতার কেন্দ্রভূমি মক্কা পঙ্কিলতামুক্ত করার জন্য বিশ্বনবী নীরব আয়োজন করলেন।

তিনি ধ্বংযজ্ঞ চান না, তিনি কুরাইশদের রক্ষা করতে চান, তিনি চান প্রেম ও ভালোবাসা দিয়ে জয় করতে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) ১০ রমাদান ১০ হাজার সাহাবিসহ মদিনা থেকে মক্কার উদ্দেশে যাত্রা করলেন। 


মক্কার উপকণ্ঠে এসে ‘মারাউজ জাহরান’ নামক গিরি উপত্যকায় তাঁবু স্থাপন করলেন।

১৯ রমাদান রাতে আবু সুফিয়ান হাকিম ইবনে নিজাম ও বুদাইলকে সঙ্গে নিয়ে অনুসন্ধানে বের হলে হজরত ওমর (রা.)–এর নেতৃত্বে টহলরত ছদ্মবেশী গেরিলা সাহাবি দলের হাতে বন্দী হয়ে নবীজি (সা.)–এর কাছে আনীত হন।

দীর্ঘ ২১ বছরের নিষ্ঠুরতার পুরোহিত আবু সুফিয়ানকে রহমতের নবী (সা.) প্রেম–ভালোবাসার দীক্ষা দিলেন, পাষাণ হৃদয় দয়ার সাগরে স্নাত হলো; তিনি ইমান আনলেন।

আল্লাহর হাবিব (সা.) মক্কা জয়ের আগেই মক্কাবাসীদের মন জয় করাকে বড় বিজয় মনে করলেন।

এ সময় নবীজির চাচা হজরত আব্বাস (রা.), যিনি কৌশলগত কারণে মক্কাবাসীদের কাছে তাঁর ইসলাম গ্রহণ গোপন রেখেছিলেন, তিনিও তা প্রকাশ করলেন।

এ উভয় কুরাইশ নেতাকে নবীজি (সা.) শান্তির পয়গাম ঘোষণার জন্য প্রভাতে মক্কায় পাঠালেন এবং ঘোষণা দিতে বললেন: ‘যারা কাবাগৃহে আশ্রয় নেবে, তারা নিরাপদ; যারা আবু সুফিয়ানের বাড়িতে আশ্রয় নেবে বা তাঁর নাম বলবে, তারা নিরাপদ; যারা নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করবে, তারাও নিরাপদ।’

১৯ রমাদান সকালে নবীজি (সা.) সাহাবায়ে কিরামের বিভিন্ন দলকে মক্কার বিভিন্ন দিক থেকে প্রবেশের নির্দেশ দিলেন এবং বললেন, কাউকে আক্রমণ করবে না।

ইতিপূর্বে ‘মুতা’ অভিযানেও তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, কোনো সাধু–সন্ন্যাসীকে হত্যা করবে না, বালক–বালিকা ও শিশুদের হত্যা করবে না, নারীদের হত্যা করবে না, বৃক্ষনিধন করবে না, শস্যক্ষেত্র ধ্বংস করবে না, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করবে না এবং আত্মসমর্পণকারীকে আঘাত করবে না।

মহানবী (সা.) ক্রীতদাস উসামা ইবনে জায়েদের সঙ্গে উটে চড়ে অবনত মস্তকে সবার শেষে মক্কায় প্রবেশ করলেন।

হজরত (সা.) মক্কাবাসীদের নিয়ে একটি সভা করলেন, তিনি ভাষণে সাম্য, মৈত্রী ও একতার কথা বললেন: ‘হে কুরাইশগণ !

অতীতের সকল ভ্রান্ত ধারণা মন থেকে মুছে ফেলো, কৌলীন্যের গর্ব ভুলে যাও, সকলে এক হও। সকল মানুষ সমান, এ কথা বিশ্বাস করো।

আল্লাহ তাআলা বলেন, “হে মানুষ !

আমি তোমাদের সকলকেই এক নারী ও পুরুষ হতে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদিগকে গোত্রে ও শাখায় পৃথক করেছি, যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পারো।


নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই বেশি সম্মানিত, যে বেশি পরহেজগার।”’ (সুরা-৪৯ হুজুরাত, আয়াত: ১৩)।

সবেমাত্র মক্কা বিজয় সম্পন্ন হয়েছে। মক্কার পৌত্তলিকরা সব ধীরে ধীরে ইসলামের ছায়াতলে চলে আসছে। যে ভূমিতে আরব পৌত্তলিকতার সব গর্বের ধন ছিল সে ভূমিই আজ ইসলামের কর্তৃত্বে চলে আসছে।

মক্কা বিজয় সম্পন্ন

মক্কা বিজয় সম্পন্ন হলেও তখনো পর্যন্ত আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু গোত্র ছিল যারা কিনা ইসলামের কর্তৃত্ব মন থেকে মেনে নিত পারছিল না।


মুহাম্মদ (স) এর নেতৃত্বের প্রতি হিংসার বশবর্তী হয়ে এসব গোত্র যারা কিনা মক্কার আশেপাশেই থাকত তারা বিদ্রোহ করার পরিকল্পনা করে।

এছাড়া তারা এটাও উপলব্ধি করতে পেরেছিল যে, যেহেতু মক্কা বিজিত হয়েছে সেহেতু অনুমিতভাবেই মুসলিমদের পক্ষ হতে পরবর্তী আঘাত তাদের উপরই এসে পড়বে।

আর এ কাজে সবচেয়ে উৎসাহী ছিল হুনাইনের হাওয়াজিন এবং সাকিফ নামের দুটি গোত্র।

এই দুই গোত্রের সাথেই মুহাম্মদ (স) এর নেতৃত্বে মুসলমানরা আরবের শেষ যুদ্ধে মুখোমুখি হয়  ইতিহাসে এ যুদ্ধ হুনাইনের যুদ্ধ নামে পরিচিত।

হুনাইনের দিনগুলোর কথা মনে করো। যখন তোমরা নিজেদের সংখ্যাধিক্যতে সন্তুষ্ট ছিলে; কিন্তু তাতে তোমাদের কোনো কাজ হয়নি, বরং জমিন বিস্তীর্ণ থাকা সত্ত্বেও তা তোমাদের জন্যে সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিলো এবং তোমরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালিয়েছিলে।

অতঃপর আল্লাহ তাঁর রাসূল এবং মুসলমানদের ওপর নিজের পক্ষ থেকে সান্ত্বনা ও প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তোমরা দেখতে পাওনি এমন সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করে কাফিরদের শাস্তি দিলেন, কাফিরদের জন্যে এমনি শাস্তিই নির্ধারিত। (সূরা তাওবাঃ ২৫,২৬)

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত খুব কম সংখ্যক যুদ্ধের মধ্যে ঐতিহাসিক হুনাইনের যুদ্ধ একটি।

মুসলমানদের নিজেদের সম্পর্কে দাম্ভিকতা যে কতটুকু বিপদ ডেকে আনতে পারে এই যুদ্ধ ছিল তার একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ, এজন্য আল্লাহ তায়ালা নিজে কোরআনে বলেছেন তিনি এ যুদ্ধে মুসলমানদের উপর প্রশান্তি বর্ষণ করেছেন।

হুনাইনের যুদ্ধের প্রেক্ষাপট

মক্কা বিজয়ের পর আরবের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ দলে দলে এসে ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে। অনেক পৌত্তলিক যারা কিনা প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে মহানবী (স) এর বিরোধিতা করত তারাও মুহাম্মদ (স) কে এক নজর দেখতে উঁকিঝুকি দিতে থাকে।

ফলাফল হিসেবে দ্রুতগতিতে ইসলামের প্রসার হতে থাকে, আর তা প্রত্যক্ষ করে তায়েফের দুই প্রভাবশালী যুদ্ধবাজ গোত্র হাওয়াজিন এবং সাকিফ গোপনে গোপনে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে।

তারা বুঝতে পেরেছিল এটাই হয়তো শেষ সুযোগ, এবার মুসলমানদের পরাজিত করতে না পারলে তাদের অস্তিত্ব চিরতরে নিভে যাবে।

আর সেজন্য তারা আরবের অন্যান্য অঞ্চলের ছোটখাটো পৌত্তলিক গোত্রদের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকে।

মালিক ইবনে আওফ নাযারী নামের গোত্র প্রধানকে বাদশাহ মনোনীত করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের জন্য যুদ্ধসাজে সজ্জিত হয় হাওয়াজিন ও সাকিফ গোত্র।

 হুনাইনের যুদ্ধ

হাওয়াজিন ও সাকিফ গোত্রের নেতৃত্বে পৌত্তলিক গোত্রদের সম্মিলিত শক্তির যুদ্ধ প্রস্তুতির সংবাদ অচিরেই অবগত হয় মুসলিমরা।

এদেরকে মোকাবেলা করতে মহানবী (স) তার সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত করেন। ইতিমধ্যে মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে মুসলিমদের সামরিক শক্তিও পৌছে গেছে অনন্য এক উচ্চতায়।

তাই স্বাভাবিকভাবেই একটি শক্তিশালী বাহিনী নিয়ে মুসলিমরা ৬৩০ সালের এই ঐতিহাসিক যুদ্ধে পৌত্তলিক গোত্রদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যথাযথ রণসাজে পাড়ি দেয়।


অষ্টম হিজরির শাওয়াল মাসের ১০ তারিখে প্রায় বারো হাজার সৈন্য নিয়ে প্রবল আত্মবিশ্বাসে তায়েফ ও মক্কা শহরের মধ্যবর্তী হুনাইন নামক জায়গার উপকন্ঠে মুসলিমরা তাদের শিবির স্থাপন করে।

এদিকে হাওয়াজিন ও সাকিফ গোত্রের সম্মিলিত এ জোটের সদস্যরা পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নিতে থাকে। নিজেদের পরিচিত অঞ্চল বলে হুনাইনের পাহাড়ি এলাকার সুফল লাভ করে পৌত্তলিকরা।

তাদের তীরন্দাজ বাহিনী পাহাড়ের বিভিন্ন প্রান্তে অস্ত্র তাঁক করে মুসলমানদের উপর আক্রমণের সকল প্রস্তুতি নিতে থাকে, এদিকে মক্কার মুসলিম সৈন্যরা নিজেদের শক্তিমত্তা নিয়ে দম্ভোক্তি করতে থাকে।

কেউ কেউ অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের তোপে আগেভাগেই নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করে পৌত্তলিকদের তুচ্ছাতিতুচ্ছ করতে থাকে। এমন সময় আকস্মিকভাবে হুনাইনের পাহাড় থেকে বৃষ্টির মত তীরের আঘাত আসতে থাকে। অপ্রস্তুত মুসলমানরা বুঝতে পারে তারা আক্রান্ত হয়েছে।

ওদিকে প্রতিপক্ষের অবস্থান ঠাউর করতে না পেরে ক্রমাগত তীরের আঘাতে জর্জরিত মুসলিম সৈন্যদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, অবস্থা বেগতিক দেখে বেশিরভাগ সৈন্যই ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যেতে থাকে।

যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ

এদিকে যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ প্রতিকূলে চলে গেলে মহানবী (স) ক্রমাগত সৈন্যদের না পালানোর জন্য আহ্বান করেন। তিনি জোরে জোরে যুদ্ধ ময়দানে কবিতা আবৃত্তি করতে থাকেন। শীর্ষস্থানীয় কিছু সাহাবি তখনো বীর বিক্রমে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

মহানবী (স) এর প্রেরণাদায়ক বক্তব্য আর আল্লাহ তায়ালার সরাসরি অনুগ্রহে মুসলমান যোদ্ধাগণ আবার যুদ্ধের ময়দানে ফিরে আসে।

মুহূর্তের ভেতরেই যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। মুসলমানরা বীর বিক্রমে শত্রুদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। এবার পৌত্তলিকরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালাতে থাকে।

যুদ্ধ শেষে দেখা যায় শত্রুপক্ষের ৭০ জন সৈন্য নিহত ও সহস্রাধিক সৈন্য বন্দি হয়েছে মুসলিম বাহিনীর কাছে। বাদ বাকি পৌত্তলিক সৈন্য পালিয়ে গিয়ে তায়েফের অভ্যন্তরে একটি শক্তিশালী দুর্গে অবস্থান করল।

মুসলিমরা তাদের পশ্চাদপসরণ করে প্রায় বিশ দিন অবরুদ্ধ করে রাখে। বিশ দিন পর এই অবরোধ তুলে নেয়া হয় এবং মুসলমানরা চূড়ান্তভাবে বিজয়ীর বেশে ফের মক্কায় আগমন করে।

ইসলামের ইতিহাসে হুনাইনের যুদ্ধ ছিল ঠিক ওহুদের যুদ্ধের মতই একটি তাৎপর্যপূর্ণ যুদ্ধ। আত্ম অহংকার যে কতটুকু বিপদ ডেকে আনতে পারে তা স্পষ্ট হয়ে উঠে তাদের কাছে।

পবিত্র কোরআনে এ যুদ্ধকে আল্লাহর পক্ষ থেকে ঐশ্বরিক সাহায্য বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এ যুদ্ধের পর ইসলাম প্রচার প্রসারে কার্যত আর কোন বাধা রইল না। আরব ছাপিয়ে ইসলাম তখন পৌছে যায় প্রাচ্যের পথেঘাটে।

রিদ্দার যুদ্ধ


হযরত আবু বকর (রাঃ) এর খিলাফতের বেশীর ভাগ সময়ই রিদ্দা যুদ্ধে পরিপূর্ণ ছিল। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) এর ওফাতের খবর প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একশ্রেণীর লোক মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। কিছু গোত্র যাকাত দিতে অস্বীকার করে।

একই সময় মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সাফল্য অনেকের মনে নবু্য়ত দাবীর আকাঙ্খা জাগিয়ে তোলে। এরা হল আসাদ আন্‌সি, মুসায়লামা, তুলায়হা এবং সাজাহ্‌ নামের এক খ্রীস্টান রমণী।

রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) এর ওফাতের খবরে ভন্ড নবীদের বিদ্রোহ প্রকাশ্য রূপ নেয়। এইসব ভন্ড নবী ও বিদ্রোহীদের পরিচালিত আন্দোলন রিদ্দা আন্দোলন (Apostasy Movement) নামে পরিচিত।

হযরত আবু বকর (রাঃ) সাহস ও দৃঢ় সংকল্পের সাথে এই বিদ্রোহ দমণ করেন। খলিফা মুসলিম সৈন্যদলকে এগারটি ভাগে বিভক্ত করেন।

প্রত্যেকটি সৈন্যদলকে একজন অভিজ্ঞ সেনাপতির অধীনে দিয়ে আরবের বিভিন্ন অংশে প্রেরণ করেন। খলিফা স্বয়ং প্রধান সেনাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। 


প্রথমেই মহাবীর খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) তুলায়হাকে পরাজিত করেন। বানু আসাদ গোত্রকে ক্ষমা করা হলে তুলায়হা মদীনায় এসে ইসলাম গ্রহণ করে।

তুলায়হাকে দমণ করার পর খালিদ (রাঃ) তামিম গোত্রের আনুগত্য লাভ করেন এবং বানু ইয়ারবু গোত্রের নেতা যে ভন্ড নবী সাজাহ্‌র দলে যোগ দিয়েছিল তাকে পরাজিত ও নিহত করেন।

খলিফা ইকরামা (রাঃ) ও শুরাহবিল (রাঃ) কে মুসায়লামার বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে তিনি খালিদ (রাঃ) কে তার বিরুদ্ধে পাঠান। ৬৩৩ খ্রীষ্টাব্দে খালিদ (রাঃ) মুসায়লামাকে ইয়ামামার যুদ্ধে পরাজিত করেন।

মুসায়লামাসহ বানু আসাদ গোত্রের অসংখ্য লোক মারা যায়। অন্যদিকে বানু বকর ও পারস্যের সম্মিলিত বাহিণী পরাজিত হলে বাহরায়েন ও ওমানের বিদ্রোহ দমন হয়।


দক্ষিণ ইয়ামেনে (যেখানে সর্ব প্রথম বিদ্রোহ শুরু হয়) ভন্ড নবী আসাদ আন্‌সির অনুসারীদের দমন করতে খলিফা মুহাজীর (রাঃ) কে নিয়োগ করেন। তিনি ইয়ামেনে শান্তি স্থাপন করে হাযারমাউতের দিকে অগ্রসর হোন।

হাযারমাউতের পূর্ব ও পশ্চিম দিক হতে যথাক্রমে ইকরিমা (রাঃ) এবং মুহাজীর (রাঃ) অগ্রসর হয়ে বিদ্রোহীদের পরাজিত করেন।

হাযারমাউত প্রদেশই সবার শেষে আত্মসমর্পণ করে এবং এই বিজয়ের মধ্য দিয়েই রিদ্দা যুদ্ধের অবসান হয়।

খলিফা ভন্ড নবীদের বিরুদ্ধে যেমন কঠোর মনোভাবের পরিচয় দেন তেমনই যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে একইরূপ অবস্থান নেন। 


তাদের বিরুদ্ধে তিনি হযরত আলী (রাঃ), তালহা (রাঃ) ও যুবাইর (রাঃ) কে প্রেরণ করেন। তারা বিদ্রোহ দমন করলে যথারীতি যাকাত আদায় হতে লাগল।

রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) এর ওফাতের এক বছরের মধ্যে আবু বকর (রাঃ) রিদ্দা যুদ্ধ সফলভাবে পরিচালনা করেন এবং সকল বিদ্রোহীদের দমন করে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

ইসলামের প্রতি খলিফা ও সাহাবীদের দৃঢ় আনুগত্যই এই বিজয় তরান্বিত করে।

এই ঘটনা আমাদের শিক্ষা দেয় যে একজন মুসলিম কখনই মুহাম্মাদ (সাঃ) ছাড়া অন্য কাউকে শেষ নবী ও রাসূল মানতে পারে না এবং ইসলাম পরবর্তী কোন মতবাদ বা কোন আদর্শকেই কোনভাবে বরদাসত্‌ করতে পারে না, সে আদর্শ, সে মতবাদ যতই বড় বা ছোট হোক না কেন।

হতে পারে তা সমাজতন্ত্র, হতে পারে তা কাদিয়ানী মতবাদ অথবা কোন অজপাড়া গায়ে জন্ম নেয়া বাউল বা বৈষ্ঞব মতবাদ।

Read more: আল্লাহ তা‘আলার ওপর ঈমান

ভূমিকা : লিখতে গিয়ে যদি ভূল হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

এবং কোন সাজেশন এর প্রয়োজন হলে আমাকে ইমেইল এর মধ্যেমে জানিয়ে দিবেন !

ভালো লাগলে দয়াকরে শেয়ার করবেন ।

সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

Please Do,not Share Any Spam Links

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post